“পহেলা বৈশাখ” – সাংস্কৃতিক দন্ডেইতিহাস পরিক্রমা

‘বাঙালি মুসলমান’ নাকি ‘মুসলমান বাঙালি!’

অপসংস্কৃতি কে ‘না’ বলুন

পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ! ঢাক-ঢোল পিটিয়ে একদল পালন করলেও আর একদল এ থেকে অনেক দুরেই থাকে,হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির চর্চা বলে একটু অাড় চোখেই দেখে। জানি না,তারা ইতিহাস কোনটা জানে- সবাই যেটা জানে সেইটা নাকি ঢেকে রাখাটা! যেইটাই জানুক,আজকে আমার দালালিটা তাদের ভিত্তিকে যেমন মজবুত করবে,তেমনি চিন্তাশীলদের জন্য যোগাবে চিন্তার খোরাক।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে মোটামুটি দুই ধরনের ইতিহাস থাকলেও আমাদের বাজারে একটাই ভালো চলে,আরেকটা উল্টিয়ে রাখা হয়েছে।
মুঘল আমলে কৃষকদের কাছ থেকে খাজনা ট্যাক্স আদায়ের জন্য আরবি নববর্ষের হিসাব অনুযায়ী আদায় করা হতো।একদল জ্ঞানপাপী ঐতিহাসিক এখানে ইতিহাসটাকে একটু রং লাগিয়ে তুলে ধরেন- আরবি কোনো কোনো মাসে একদিন কম হওয়ায় বছরে ১০-১২ দিন পার্থক্য তৈরি হয়।এই পার্থক্যের কারনে ফসলি জমির খাজনা আদায়ে বিঘ্ন ঘটে। তাই বাংলা সনের প্রবর্তন করা হয়।এই তথাকথিত মহৎ কাজটি যিনি করেন,তিনি মহামতি আকবর।
হ্যাঁ,ইনিই সেই মুঘল সম্রাট, যিনি ‘আল্লাহ আকবার’- এর অর্থ করেছিলেন “আকবর-ই আল্লাহ” (নাউজুবিল্লাহ)।
যিনি একাধারে শেষ নবী এবং ইমাম মাহদী দাবীকারী! আর হ্যাঁ,এই মহামতি একটা ধর্মও তৈরি করেন- “দ্বীন ই এলাহী”।
তার কালিমা ছিল-” লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবর খলিফাতুল্লাহ।”
এই ধর্মের সালাম- ” আল্লাহু আকবর” মানে
আকবরই আল্লাহ।

১৫৮২ সালে আকবর নিজেকে খোদা দাবী করে এই ধর্ম তৈরি করেন, যাতে ইসলামী শরিয়তের প্রত্যেকটি বিধানের বিপরীত অাইন চালু করেন।আর তার এই ধর্মের কলকব্জা নাড়ত হিন্দু জ্যোতিষ শাস্ত্রের পন্ডিতরা।আকবর অনেক ছোট বেলায় সিংহাসনে বসার পর থেকেই সংখ্যাধীক জনগোষ্ঠী হিন্দুদের মন রাখার চেষ্টা করত-যাতে তার ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
তবে দুঃখের বিষয় হলো তার ধর্মের অনুসারী ছিলেন মাত্র ১৮ জন মতান্তরে ২০ জন।
হয়ত পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র এবং প্রভাবশালী ধর্ম দ্বীন-ই এলাহী( যার প্রভাব এখনো বর্তমান এবং তৈরি হয়েছে না বলা অনেক অনুসারী)!

( আকবরের ধর্মের প্রভাব যে বর্তমান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করছে – এ বিষয়ে বিস্তারিত অন্য পোস্টে খুব তাড়াতাড়ি পরিস্কার করব,ইনশাআল্লাহ)

তার এই ধর্ম অনুসারে চাঁদের হিসাবে খাজনা অাদায়ে তিনি রাজি নন,কারন এতে ইসলাম ধর্মের সংশ্লিষ্টতা চলে অাসে।তাই কি করা যায়, এ বিষয়ে সভাসদের পন্ডিতদের কাছে পরামর্শ চাইলেন।জ্যোতিষিরা প্রস্তাব দিলেন নতুন সাল গণনার।প্রস্তাব স্ব- সম্মানে গৃহীত হইল।১৮৮৪ সালে তৈরি হয়ে গেল ১২ মাসের নাম,হিন্দু জ্যোতিষ শাস্ত্রের ১২ নক্ষত্রের নামে!
বিশাখা নক্ষত্র থেকে বৈশাখ, জায়ীস্থা থেকে জ্যৈষ্ঠ, পূর্বাষাঢ়া এবং উত্তরাষাঢ়া থেকে আষাঢ়, শ্রাবণী থেকে শ্রাবণ,পূর্ব এবং উত্তর ভদ্রপদ থেকে ভাদ্র, আশ্বায়িনী থেকে আশ্বিন, কার্তিকা থেকে কার্তিক, আগ্রায়হন থেকে অগ্রহায়ণ, পউস্যা থেকে পৌষ,পূর্ব এবং উত্তর ফাল্গুনী থেকে ফাল্গুন এবং চিত্রা নক্ষত্র থেকে চৈত্র।
প্রত্যেক বৈশাখ মাসের প্রথম দিন আকবর খাজনা আদায় করত।

(বিঃদ্রঃ বাংলা সন গণনা সপ্তম শতাব্দীতে রাজা শশাঙ্ক শুরু করেন,আর আকবর মাসের নাম দিয়ে পরিপুর্ণতা আনেন।)

কি আশ্চর্য, তাই না!
তৈরি হলো একটা ধর্মের প্রয়োজনে আরেকটা ধর্মের সহযোগিতায়- আর আজকে সেটাকে একটা বৃহত্তর জাতির ইতিহাস বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে!
★যদি ধরেও নেই,এটা হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি না,তাহলে ভালো ভাবে খেলায় করুন- দ্বীন ই এলাহী চালু হয় ১৫৮২ সালে আর বাংলা সন চালু করা হয় ১৫৮৪ সালে,যখন দ্বীন ই এলাহী ধর্মের প্রচারকার্য চলছে,চলছে আকবর কে আল্লাহ বানানোর আইন!
তারই একটি মিশন বাংলা সন।
এই দিক থেকেও এটা মুসলমানের জন্য মানা কতটা যুক্তিযুক্ত – তা পাঠকের বিচার্য।

চমকে উঠলেন হয়ত এই ইতিহাস দেখে,এই ইতিহাসটাই বাজারে উল্টিয়ে রেখে সুকৌশলে মুসলমান থেকে মুশরিক বানানোর পায়তারা চলছে।

এতো গেল ইতিহাস!

এবার চলুন জেনে নেয়া যাক,পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের কিছু রীতিনীতি।

★প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে এবং দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের প্রাক্কালে ১৯৩৮ সালে যখন এশিয়ায় কিছু খন্ড খন্ড সংঘর্ষ হচ্ছিল, তখন আমাদের এদেশীয়-ওদেশীয় হিন্দু ব্রাহ্মণরা পহেলা বৈশাখের দিনে “বৃটিশদের জয়ের” জন্য হোম,পূজা ও কির্তনের ব্যবস্থা করে।
(এই তথ্য আশা করি সচেতন পাঠকদের, বৃটিশ খেদানোর ইতিহাসে নতুন ভাবনার উদ্রেগ হবে।কারা সংগ্রাম করেছিল বৃটিশদের বিপক্ষে – হিন্দু নাকি ইতিহাসে উপেক্ষিত মুসলমানরা?জানতে হবে নিজেদের ইতিহাস❗জানতে হবে গৌরবের সোনালী অধ্যায়!)

→হোম, যোজ্ঞ কি কখনো অসাম্প্রদায়িক পহেলা বৈশাখের নমুনা হতে পারে?
প্রশ্ন রেখে গেলাম পাঠকদের কাছে।

★১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের “মঙ্গল শোভাযাত্রায়” ব্যবহৃত মুর্তি,ভাষ্কর্য,বিভিন্ন প্রাণীর চিত্রিত ছবি- কোন ধর্মের প্রতিক,আশা করি তা অজানা নয়।
তাহলে কেন তা ঢালাওভাবে বাঙালিদের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে?

★বউমেলা- ইশাখাঁর সোনারগাঁওয়ে বর্তমান নারায়ণগঞ্জে প্রায় চারশো বছরের পুরোনো বটগাছের নিচে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বসে “বউমেলা”।পাঁচদিন ব্যাপি চলা এই মেলা শুরু হয় সিদ্বেশ্বরী দেবীর পুজার মাধ্যমে। স্বামীর সোহাগিনী হতেই হিন্দু রমনীরা ছুটে আসেন এই পুজোয়।

→হিন্দু সমাজের এই বহুল প্রতিক্ষিত পহেলা বৈশাখকে কেন চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতি হিসবে??

নাকি মুসলমানদের পাকিস্তানি তকমা লাগিয়ে বাঙালি থেকে বাদ দেয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের অারেক নাম এই পহেলা বৈশাখ???

★ নারায়ণগঞ্জে আরেকটি মেলার আয়োজন করা হয় যার নাম ঘোড়ার মেলা।যামিনী সাধক নামের এক পুরোহিত পহেলা বৈশাখের দিনে ঘোড়ায় চড়ে এসে সবাইকে পুজার প্রসাদ বিতরণ করতেন।তিনি মারা যাওয়ার পর হিন্দুধর্মাবলম্বীরা সোনারগাঁও থানার পেরাব গ্রামে তার স্মৃতি স্তম্ভ বানায় যেখানে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের দিনে ঘোড়ার মুর্তি রাখা হতো।কালক্রমে সেখানে এখন মেলার আয়োজন করা হয়।তথাকথিত বাঙালিরা মেলার যায়,ঘোড়াফেরা করে ক্লান্ত হলে তাদের শ্রান্তির জন্য ব্যবস্থা করা হয় “কির্তন” এর।

→এ কোন বাঙালির ঐতিহ্য?
→প্রশ্ন জাগে, যে মুসলমানদের সন্তানরা পহেলা বৈশাখকে বাঙালির ঐতিহ্য বলে চালিয়ে দেয়, তাদের কোন সংস্কৃতিতে পূজা,কির্তন,যোজ্ঞ আর প্রসাদ বিতরণ হয়???

★★পান্তা ভাত আর ইলিশ খেয়ে যদি আপনি বাঙালিআনা দেখাইতে চান,তাহলে প্রশ্ন এসে যায়- ” আপনি বাঙালি মুসলমান নাকি মুসলমান বাঙালি❓”
পবিত্র মাহে রমজানুল মোবারক আর পহেলা বৈশাখ একসাথে আপনার দোড়গোড়ায় দাড়িয়ে!
আপনি কাকে ফিরিয়ে দিবেন?

আপনি আগে বাঙালি পরে মুসলমান নাকি আগে মুসলমান পরে বাঙালি??
এই প্রশ্নেরও উত্তর আপনার জিম্মায়!

পান্তা ভাত আর ইলিশ যদি হয় মাহে রমজানের সকালের বাঙালিআনা,
সেতো রাজা শশাঙ্কের ধর্মের অনুসারীর হবে!
হবে আকবরের দ্বীন- ই এলাহী ধর্মের ধর্মের অনুসারীর!

It’s a great challenge for you!

এবারের মাহে রমজান, সাধারণ কোনো রমজান নয়।এখানে অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা শিক্ষা আছে! আছে বহুদিনের ঘুম্রজালে পেঁচানো প্রশ্নের উত্তর-
•আমি কি বাঙালি মুসলমান??
•নাকি আমি মুসলমান বাঙালি???
•বাঙালি সংস্কৃতি বলে যেটাকে উগলে দেয়া হচ্ছে – তা আসলে কোন সংস্কৃতি?
•আমার বাঙালি সংস্কৃতি কোথায় হারিয়ে গেল?
•কেনই বা একটা ধর্মের ধর্মীয় সংস্কৃতিকে বাঙালি সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়ার এতো জোর পায়চারা?
•আর যাদের সংস্কৃতি অন্য নামে চালানোর অপচেষ্টা চলছে,তারাই বা চুপ কেন?

খুজতে হবে এসব প্রশ্নের উত্তর,ভাবতে হবে, ভাবাতে হবে!
আমি একজন মুসলিম হিসেবে, বাংলাদেশের বাঙালি হিসেবে, এদেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ ধর্মীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে এই পহেলা বৈশাখে আমার দায়িত্ব –

• আমার প্রতিবেশী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ধর্মীয় উৎসব “পহেলা বৈশাখ” পালন করতে পারে, সে দিকে যথাসম্ভব সতর্ক দৃষ্টি রাখা।

•আকবরের উত্তরসূরী দ্বীন-ই এলাহীর অনুসারীদের চিহ্নিত করে রাখা!

Sayeed Muhammad Sanower

Leave a comment

Design a site like this with WordPress.com
Get started