২০১৩-‘২১ কিছু ঘটনাপ্রবাহ ও আমাদের শিক্ষা

রাজনৈতিক মাঠ উত্তপ্ত।তথাকথিত যুদ্ধাপরধীদের বিচার,শাহবাগে নাচা-নাচির মহড়া,অনলাইনে ইসলাম, রাসুল সাঃ ও আলেমদের নিয়ে উলঙ্গ বেহায়াপনা! এর মধ্যেই হেফাজতের কর্মসূচী ঘোষণা(অনেকের ভাষায় আচমকা)- ৫ই মে শাপলা চত্বরে বিক্ষোভ- নাস্তিক ব্লগার ও ইসলাম বিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে।
এই কর্মসূচী নিঃসন্দেহে ওদের চেতনায় অাগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।সেই অগ্নি স্ফূলিঙ্গই প্রকট হলো সেদিনের জনস্রোতে।
প্রায় অর্ধযুগের কিছু কম সময় ধরে গড়ে তোলা রাষ্ট্রযন্ত্র বহনকারী, লেবাসধারী সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দেয়া হলো বিক্ষুব্ধ জনতার উপর।মরিচা ধরা রাষ্ট্রযন্ত্রের সেদিনের পরীক্ষায় – কতজন পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করল, তাই নিয়ে শুরু হলো রাজনীতি।
১২,১৫,৫৮,৬৮ বনাম হাজার হাজার!! তার সঠিক ইতিহাস কিন্তু আমরা আজও পেলাম না।
সময় পরিবর্তন হচ্ছিল, সাথে কিছু সম্পর্কও।সরকার তাদের কে সঙ্গ দেয়ার চেষ্টা করছিল।এতটুকু প্রমাণ করতে,”তিনি ইসলাম বিদ্বেষী নন!” কারণ কিছু ইসলামী জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে তখন সরকারি সেবায় রাখা হয়েছিল,এটা জনগণ গ্রহণ করতে পারছিল না। তাই সম্পর্কটা অনেকটাই মাথায় “পট্টি” বাধার মতো রাজনীতিতে রুপান্তর হয়।কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা বুঝতে পারি নি।
সম্পর্ক যে গভীর হয়েছে তা প্রমাণ করতে সরকার কিছু সমালোচিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলেন। ইসলামি দলগুলোর দীর্ঘদিন আন্দোলনের পরে পাঠ্য বইয়ে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন এনে জালেমদের সাথে আলেমদেরও মন রাখলেন।
আল-হাইআতুল উলইয়া লিল-জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’র সুদীর্ঘ দিনের দাবীকে মেনে নিয়ে দাওরায়ে হাদিস কে স্নাতকোত্তর সম্মান দিয়ে আইন করা হয়।
২০১৮ সালের ৪ঠা নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেদিনের সেই শোকরানা মাহফিলে উপস্থিত কওমী জন সমুদ্রের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে
মুফতি রুহুল আমিন “কওমী জননী”- বলে পরিচয় করে দেন।
মাতৃহারা কওমি সন্তানরা ফিরে পেল তাদের মা!
ভাই হারা জাতি ভাইরা- ফিলে পেল তাদের মা!
আমরা ফিরে পেলাম আমাদের মা!
সর্বোচ্চ আদালতের সামনের গ্রিক মূর্তি সরানো, সদ্য মূর্তি বিরোধী আন্দোলন সহ সরকারের(প্রধানমন্ত্রীর) অবস্থান ছিল রহস্যজনক- জালেমদের সাথে আলেমদেরও মন রাখার চেষ্টা!
দীর্ঘদিনের এই রাজনীতি স্বমহিমায় আত্মপ্রকাশ করল একাধারে বায়তুল মোকাররমে,হাটহাজারিতে,বি বাড়িয়াসহ বিভিন্ন জায়গায়। জনস্রোতে চলল আরো একবার রাষ্ট্রযন্ত্রের পরীক্ষা।
রক্তে রঞ্জিত হলো বায়তুল মোকাররম! রাজপথ পিচ্ছিল হলো হাটহাজারীর ছাত্র-জনতার রক্তে! আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হলো বি বাড়িয়ায় প্রকৃত শহিদ জননীর আর্ত চিৎকারে! সারা দেশে বয়ে গেল রক্তের বন্যা- ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে❗
মুসলিম বিদ্বেষী কসাই সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর- শুরু থেকেই আলেম ওলামাদের সাথে সাধারন দেশ প্রেমিক জনতা মেনে নিতে পারছিল না।বাম ধারার কিছু ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি সাধারন মানুষের নেতৃত্বে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে ছিল তথাকথিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম।কঠিন হুমকি, হুসিয়ারী সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে আওয়াজ নিচু হয়ে যায় অনেকের।যেটাকে সমালোচকরা নেতিবাচক ভাবে দেখলোও অনেকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা মনে করছিল।
কিন্তু হঠাৎ ২৬ শে মার্চের বিক্ষোভে যা হলো,তার জন্য হয়ত কেউ প্রস্তুত ছিল না।
২৬,২৭,২৮ শে মার্চের কর্মসূচীতে কওমী জননীর রাষ্ট্রীয় বৈধ-অবৈধ বাহিনীর হাতে শহিদের স্তুপ তৈরি হলো। প্রাণ হারালো ১৭/১৮ জন।
বন্ধ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম,হরতাল, বিক্ষোভ, কর্মসূচী! সব শেষ!
এখন আমাদের করনীয় কি?
কি পেলাম আমরা?
আমাদের “জননী” আমাদের কি উপহার দিলো?
সেই হিসাব এখনো মিলছে না!
তবে এতটুকু আমাদের শিখে রাখা দরকার-
১.তাগুত কখনো ইমানদারের বন্ধু হতে পারে না,ইতিহাস সাক্ষী।
২. তাগুতের সাথে কোনো মুল্যেই সমঝোতা নয়।
৩. মিষ্টি কথার ফুলঝুরি,আর সামান্য সার্থের দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যতের বিরাট পরিকল্পনা জলাঞ্জলি দেয়া বিচক্ষন রাজনীতিবীদের সিদ্ধান্ত হতে পারে না।
৪. অতিতের ইতিহাস কে ভুলে শত্রুর সাথে গলায় গলা জড়ালে, অদূর ভবিষ্যতে ঘাড়ের উপর মাথাটা খুঁজে পাওয়া যাবে না!
সেই সাথে আমার অজ্ঞ মস্তিষ্কে বিজ্ঞ রাজনীতিবীদদের জন্য কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। জানি, তা হয়তো পৌছাবে না তাদের কাছ পর্যন্ত।
কিন্তু একজন সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে, একজন আনুগত্যশীল কর্মী হিসেবে,একজন শহিদী তামান্না লালনকারী হিসেবে আপনারও জানা দরকার মনেকরি এই প্রশ্নগুলো।
১.খুনিদের বিচার কি অাবাও আল্লাহর জন্যই রেখে হবে?
২. শহিদদের মর্যাদার জন্য কি কিয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?
৩.শহিদদের তালিকা কি চুড়ান্ত হয়েছে? আহতদের তালিকা কি হবে না?
৪. জাতিকে কি আবারও ভবিষ্যতে অশরীরী সমঝোতার(তথাকথিত) মুখোমুখি হতে হবে??
Sayeed Muhammad Sanower