সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ! ‘বিকল্প কি?

একবিংশ শতাব্দীর একদশক শেষ হওয়ার পূর্বেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে।বিশেষ করে ফেসবুক -যা সাধারন মানুষ থেকে শুরু করে সেলিব্রেটি পর্যন্ত একক অাধিপত্য বিস্তার করে অাছে।বর্তমানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭৯ কোটি যা গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।এর তুলনায় অনান্য মাধ্যম গুলোর খুব সামান্যই ব্যবহারকারী বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে। ফেসবুকে মানুষ তুলে ধরছে তার প্রতিটি মুহূর্তের অাপডেট।ফলে এটা একদিকে যেমন যোগাযোগের অনন্য মাধ্যম , অন্য দিকে নিজের অনুভূতি-মতামত প্রকাশেরও মাধ্যম। এখানে তুলে ধরা হচ্ছে দেশের প্রতিটি প্রেক্ষাপট।পারিবারিক সমস্যা থেকে রাষ্ট্রীয় সমস্যা পর্যন্ত এখানে আলোচনা হচ্ছে।প্রশ্ন তুলছে, মতামত দিচ্ছে,গুজব রটাচ্ছে।
বিভিন্ন সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠন গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর ব্যবহার একটু ভিন্নভাবেই করছে।তারা তাদের অাদর্শ প্রচারে,জনবল তৈরি এবং একতাবদ্ধ করতে, কর্মসূচি ঘোষণা এবং প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম -ফেসবুক। মুহূর্তেই ছড়িয়ে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ঘোষণা প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মীর কাছে।এতে যেমন সুবিধা হয়েছে তেমনি তৈরি হয়েছে কিছু মানুষের অসুবিধা।
সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে রাজনৈতিক ইস্যু গুলো বেশ মাথাচাড়া দিচ্ছে ফেসবুকে। রীতিমতো ফেসবুক হয়ে গেছে রাজপথ। যা বর্তমান সরকারের জন্য হুমকির কারন হয়ে দাড়িয়েছে।বলা যায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তখন মামলি ব্যাপার হয়ে যায়।
রাষ্ট্রযন্ত্র তখন ঘুরে দাড়ায়,বন্ধ করে দেয়া হয় অনির্দিষ্টকালের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। মুহুর্তেই মানুষ যেন পঙ্গু হয়ে যায়। জলন্ত আগুনে যেন বর্ষণ শুরু হয়।
সরকার যখন প্রত্যক্ষ করেন আন্দোলনের জোয়ারে ভাটা লেগেছে – তখন খুলে দেয়া হয় রাজপথ।পরিবেশ তখন শান্ত, চাপা পড়ে যায় আরেক কোনো ইস্যুর নিচে!তবুও সোসাল মিডিয়ার জনপ্রিয়তা সামান্যও কমছে না।এই একক জনপ্রিয়তার বিশেষ কিছু কারন রয়েছে।যেমন:
১.প্রতিনিয়ত ব্যবহারকারীর জন্য ব্যবহার সহজ করা হচ্ছে।
২.সহজলভ্য ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
৩.জবাবদিহিতার প্রয়োজন হয় না।
৪.সহজ প্রচারের মাধ্যম।
৫.প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সরকারের ছায়া ইত্যাদি।
এত জনপ্রিয় মাধ্যম হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেলে যত সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা,তা মুলত লক্ষ্য করা যায় না।তবে অনেক কাঠ-খর পুড়িয়ে যে একটা আন্দোলনের দানা বাধা হয়,তা চোখের নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়। সমাধানের দোড় গোড়ায় দাড়িয়েও চাপা পড়ে যায় রাষ্ট্রযন্ত্রের এক বোতামে।একজন সচেতন মানুষ হিসেবে,সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে,একজন সংগঠক,একজন বিপ্লবের প্রত্যাশি হিসেবে অবশ্যই এটা আমাদের গভীর উদ্যেগের বিষয় হওয়া দরকার, ‘বিকল্প পথ কি?’- তা খুজে বের করা।
বিকল্প সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে তাকাতে হবে পিছনে, ফিরে যেতে হবে ইতিহাসে। এটুকু পাঠকের নিজ কর্তব্যের উপর ছেড়ে দিয়ে সামান্য উদাহরণ টানছি।ডাকযোগ অাবিষ্কার হওয়ার পূর্বে মানুষ কবুতর,খরগোশসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর মাধ্যমে চিঠি-পত্র গন্তব্যে পাঠাতো,এরপর ডাকযোগ, তারপর আজকের পৃথিবী-যেখানে তথ্যের গোপনীয়তা কতটা রক্ষিত হচ্ছে তা প্রশ্নের বিষয়।
তুলে ধরছি ইতিহাস থেকে একটা কিঞ্চিৎ সফল কিন্তু দুরদর্শী বিপ্লবের ঘটনা।
মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ’র সময়কার সিপাহী বিদ্রোহের ঘটনা।ধর্মীয় অনুভূতিতে অাঘাত,মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘন, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে শোষণ ও নিপিড়ন ছিল সিপাহী বিদ্রোহের মূল কারন।(যা বর্তমান সময়ে কতটা যুক্তিযুক্ত, তা পাঠকের বিবেচ্য)
বিদ্রোহ চলাকালে ১৮৫৭ সালের ৩১ শে মে সারা ভারতে একসাথে বিদ্রোহ,বিপ্লব ও আন্দোলনের অগ্নি স্ফূলিঙ্গ জালিয়ে দেয়া হবে- সিদ্ধান্ত নিল বিপ্লবীরা।কিন্তু সমস্যা হলো কোনোভাবে যেন এ তথ্য কোম্পানির শাসকদের কাছে না পৌছায়।সারা ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা বিপ্লবীদের কাছে এই তথ্য পাঠানোর জন্য সৃষ্টি করা হলো এক অভিনব কৌশল-“চাপাটি রুটি”। এই রুটির ভিতরে চিঠি ঢুকিয়ে ইংরেজদের চোখে ধুলো দিয়ে সম্পূর্ণ ভারতে পৌছনো হলো সংবাদ। সুদক্ষ বৃটিশ গুপ্তচরেরা তা আচও করতে পারল না।যদিও এই বিদ্রোহে জয়লাভ করতে পারেনি তধাপি এটিই ছিল ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম-যার প্রভাব ছিল সুদুরপ্রসারী।
এখানে আমার পয়েন্ট বিদ্রোহ নয়,বরং পদ্ধতি।পদ্ধতি নির্দিষ্ট হবে কি না,তা নিয়ে দ্বিধা থাকলেও এতটুকু পরিস্কার- তা হতে হবে ব্যতিক্রম এবং যা শাসক কর্তৃক কোনোভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে না।তবেই একটা বিপ্লব সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা যায়।
এটাতো গেল,উপস্থিত সময়ে সমস্যা সমাধানের পথ।এর বাহিরে সুদুর প্রসারী পরিকল্পনাও একজন বিপ্লবী নেতার থাকা আবশ্যক।যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বাহিরে অনন্য কোনো মাধ্যম তৈরি করতে হবে অথবা লোক চক্ষুর আড়ালেও সংগঠনকে সাজাতে ভিন্ন ফরমেটে। Multi Level Supervising(MLS) একটা উদাহরণ।
আন্দোলনের সফলতা নির্ভর করে,সঠিক পরিকল্পনা ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতার সিদ্ধান্তের সাথে-
তথ্য নিরাপদে রেখে কতজনের কাছে পৌছাল- তার উপর।
সুতরাং সফল বিপ্লবের স্বপ্ন যারা লালন করে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাদের একমাত্র মাধ্যমে হতে পারে না।মুক্ত আকাশে উড়ার যাদের স্বপ্ন- ফেসবুক তাদের পথ হতে পারে না।
ভাবুন,পরিকল্পনা করুন, সিদ্ধান্ত নিন,যোগ্য নেতৃত্ব তৈরি করুন- সফল বিপ্লবের পথে আরো এক পা এগিয়ে যান।
Sayeed Muhammad Sanower